মহাকাশে পানিসমৃদ্ধ নতুন গ্রহের সন্ধান


আমাদের সৌরজগতের খুব কাছে পানিসমৃদ্ধ, উষ্ণ এক গ্রহের সন্ধান পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তবে এর আকার পৃথিবীর চেয়ে আড়াই গুণ বড়। ভর সাড়ে ৬ গুণ বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, পৃথিবীর মতো প্রাণী বসবাসের উপযুক্ত ওই গ্রহ। পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরের গ্রহটি আমাদের সূর্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট লোহিত বর্ণের এক নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। হার্ভার্ডের স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের (সিএফএ) স্নাতকের ছাত্র জাকোরি বার্টা প্রথম মহাকাশে এর দেখা পান। ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের খুব সাধারণ এক টেলিস্কোপের সাহায্যে এটি শনাক্ত করতে পারায় বিজ্ঞানীরা বিস্মিত হয়েছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী নেচার-এ এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। নতুন এ গ্রহটির নাম দেয়া হয়েছে জি জে ১২১৪বি। এটি পৃথিবী থেকে ২ দশমিক সাত গুণ বড়। এ গ্রহের তিন-চতুর্থাংশ পানি ও বরফ এবং বাকি একাংশ পাথুরে শিলায় গঠিত। সম্ভবত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের ঘন স্তর একে ঘিরে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি পানিসমৃদ্ধ ‘সুপার আর্থ’।
গ্রহটি যে নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে তার উপরিভাগের তাপমাত্রা ২ হাজার ৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নক্ষত্র থেকে এর দূরত্ব ১৩ লাখ মাইল। হিসাব করে দেখা গেছে, এ দূরত্বে থাকা গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হবে ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ তাপমাত্রায় প্রাণের অস্তিত্ব আশা করা যায়। যদিও পৃথিবীর তুলনায় তা বহুগুণ বেশি। ফলে পৃথিবীতে যে ধরনের প্রাণী বাস করে সে ধরনের প্রাণী সেখানে থাকতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা অবশ্য এটা নিয়ে খুব একটা ভাবছেন না। পৃথিবীর এত কাছে এমন একটি গ্রহ পাওয়া গেছে সেটাকে তারা প্রথম পর্যায়ে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন। এ পর্যন্ত যত মহাজাগতিক গ্রহের সন্ধান মিলেছে তার মধ্যে এ গ্রহটাই পৃথিবীর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি মিলে। এটি নিয়ে এ পর্যন্ত মোট দুটি গ্রহ পাওয়া গেল পৃথিবীর মতো। অন্যটির সন্ধান মিলেছে গত অক্টোবরে। এর অবস্থান পৃথিবী থেকে ১৫০ আলোকবর্ষ দূরে পেগাসাস নক্ষত্রপুঞ্জে।
নেচার-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রধান রচয়িতা ডেভিড শারবুনো বলেন, পৃথিবীর অনেক কাছে আমরা এমন একটি ‘পৃথিবী’ খুঁজে পেয়েছি, যেখানে পানি আছে এবং গ্রহটি একটি খুব ছোট নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করছে। জি জে ১২১৪ প্রতি ৩৮ ঘণ্টায় একবার তার নক্ষত্রের চারপাশ ঘুরে আসে। নতুন এ গ্রহ আবিষ্কারের ফলে মহাকাশের নক্ষত্র প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেল।