ঝিনাইদহে সহস্রাধিক পরিবার সচ্ছল ছোবড়া বিক্রি করে

নারিকেলের ছোবড়া এখন আর ফেলনা নয়। ঝিনাইদহ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার ছোবড়া যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ছোবড়া থেকে তৈরি হচ্ছে দড়ি, পাপোশ, জাজিমসহ বিভিন্ন শৌখিন জিনিসপত্র। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে জেলার সহস্রাধিক পরিবারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।
ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের যুবক আতিকুর রহমান খোকন ৫/৬ বছর আগে নারিকেলের ব্যাবসা শুরু করেন। বিভিন্ন বাজার থেকে নারিকেল কিনে ঢাকা, চট্টোগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতে শুরু করেন। শহরে ছোবড়া ছাড়া নারিকেলের কদর বেশি। নারিকেল থেকে ছাড়ানো ছোবড়া কোনো কাজে আসত না। তাই পানির দামে তিনি ছোবড়া বিক্রি করতেন স্থানীয় লেপ-তোশকের দোকানিদের কাছে। কিন্তু বাজার থেকে নারিকেল কিনে মানুষ দিয়ে ছোবড়া ছাড়িয়ে নারিকেল বিক্রি করে কাঙ্ক্ষিত লাভ থেকে বঞ্চিত হতেন। একপর্যায়ে খোঁজ পান চুয়াডাঙ্গার ছোবড়া ধোনার মিলের। নারিকেল থেকে ছাড়ানো ছোবড়া সেখানে পাঠানো শুরু করেন তিনি। একই ব্যবসা থেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আস্তে আস্তে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন খোকন। এখন শৈলকূপা, ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুরসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার বাজার থেকে নারিকেল সংগ্রহ করে নারিকেলের পাশাপাশি ছোবড়ার ব্যবসাও শুরু করেছেন। খোকনের দেখাদেখি শৈলকূপা উপজেলার কাতলাগাড়ি, রয়েড়া, কাচেরকোল, শেখপাড়া, হাটফাজিলপুর, ভাটই, গাড়াগঞ্জ, খুলুমবাড়িয়াবাজার, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলো, হাটগোপালপুর, হলিধানি, পবহাটি, হরিণাকুণ্ডু ও কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নারিকেল ব্যবসায়ীরা নারিকেলের পাশাপাশি ছোবড়ার ব্যবসা শুরু করেন। তবে গত দু’বছরে জেলায় এই ব্যবসার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। গ্রামের দরিদ্র ভ্যান-রিকশা চালকরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছোবড়া সংগ্রহ করেও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলার বেশিরভাগ ছোবড়া যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা ও বগুড়া জেলাতে। সেখান থেকে ছোবড়া ধোলাই হয়ে দড়ির মিলসহ বিভিন্ন এলাকার লেপ-তোশকের দোকানে চলে যায়। বর্তমানে জাজিম, দড়ি, পাপোশ, বিভিন্ন শৌখিন শোপিসসহ দামি জিনিসের উপকরণ হিসাবে নারিকেলের ছোবড়া ব্যবহার করা হচ্ছে। ছোবড়া ব্যবসায়ী ঝিনাইদহের আতিক জানান, একটি নারিকেল গেরস্তদের কাছ থেকে ক্রয় করেন ৮ থেকে ১০ টাকায়। বেপারীদের কাছে বিক্রি করা হয় ১১/১২ টাকা করে। নারিকেল বেশি যায় তেলের মিলে। ছোবড়া ছাড়িয়ে প্রতিটি নারিকেলের ছোবড়া এক টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, একজন মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ী এক মৌসুমে অর্থাত্ এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত আড়াই লাখ নারিকেল বিক্রি করেন। বড় ব্যবসায়ী এক বছরে ছোবড়া বিক্রি করে আয় করেন প্রায় ৫ লাখ টাকা। জেলার প্রায় শতাধিক ব্যবসায়ী নারিকেলের ছোবড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ঝিনাইদহ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকার ছোবড়া যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
এছাড়া প্রতিষ্ঠিত ছোবড়া ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীও ছোবড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। এরা মানুষের বাড়ি থেকে ছোবড়া সংগ্রহ করে দরিদ্র মহিলাদের বাড়িতে ছাড়াতে দিয়ে আসে। ছাড়ানো ছোবড়া স্থানীয় লেপ-তোশকের দোকানে বিক্রি করেন। জেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় সহস্রাধিক পরিবারের দরিদ্র মহিলা ছোবড়া ছাড়ানোর কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। শৈলকূপা কাজীপাড়া গ্রামের রিকশাচালক বাবুলের স্ত্রী শাহিদা বেগম গৃহস্থালি কাজের অবসরে দু’মেয়েকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ছোবড়া ছাড়ানোর কাজ করেন। এক কেজি ছোবড়া ছাড়ালে দুই টাকা করে পান। সংসারের কাজ করেও দিনে এক মণ ছোবড়া ছাড়াতে পারেন তিনি। এতে দিনে তিনি ৮০ থেকে একশ’ টাকা আয় করেন, যা দিয়ে সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।
 
 
From: আমার দেশ