
তীব্র শীতল আবহাওয়ার কারণে পৃথিবীর একেবারে উত্তর ও দক্ষিণে অবস্থিত দুই মেরুর পুরোটাই বরফে আচ্ছাদিত। প্রায় সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন বর্গমাইল আয়তনের দক্ষিণ মেরুর আকার এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার পরই। হাজার হাজার বছর ধরে এই এন্টার্কটিকায় বরফের পাহাড় জমে আছে। এ বরফের পুরুত্ব কোনো কোনো জায়গায় কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত। পানির ওপর ভেসে থাকা বরফের পাহাড়ের কারণেই অন্য যে কোনো মহাদেশের তুলনায় দক্ষিণ মেরুর গড় উচ্চতা বেশি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এসব বরফ খণ্ডও গলতে শুরু করেছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। কিন্তু তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে যদি সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। অ্যান্টার্কটিকার বরফের পুরুত্ব কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, সমুদ্রের পানির উষ্ণতা যদি আর মাত্র ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বাড়ে তাহলে বিশাল এই দক্ষিণ মেরুতে ধস শুরু হতে পারে। অর্থাত্ পানির উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সেখানে যেসব বরফের পাহাড় রয়েছে সেগুলো গলে যেতে শুরু করবে এবং একপর্যায়ে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকার বিশাল অংশ পানিতে তলিয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটসের গবেষক রবার্ট ডিকন্টো এবং পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক ডেভিড পোলার্ড সম্প্রতি তাদের এক গবেষণা থেকে এ বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তারা জানিয়েছেন, এমনটি যদি ঘটে তাহলে বিশ্বের সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে পাঁচ মিটার অর্থাত্ প্রায় ১৬ ফুট। ফলে সাগরে হারিয়ে যাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম উচ্চতাসম্পন্ন বহু দেশ। বিশেষ করে মহাদেশীয় এলাকাতে অবস্থিত ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তবে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত লেগে যাবে এমন মন্তব্য করেছেন ব্রাসেলসের ফ্রাইয়ে ইউনিভার্সিটির গবেষক ফিলিপ হুইব্রেখটস। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক প্যানেল এক হিসেবে জানিয়েছে, গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ১.৮ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে দেশগুলো যদি এখনই কার্বন নির্গমন না কমায় তাহলে এ তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার আরও বেশি হবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।